দুই বছরের করোনাকাল শেষে এবারের ঈদুল ফিতরে সবচেয়ে বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ হতে পারে, মোট যানবাহনের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে যা কয়েক গুণ বেশি। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, নাড়ির টানে বাড়ি ফেরাকে কোনভাবেই আটকে রাখা যাবে না, তবে ঈদ যাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে নেয়া যেতে পারে বেশ কিছু পদক্ষেপ।
এবারের ঈদে ঢাকা থেকে এক কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করবে বলে ধারণা করছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। একই সঙ্গে ১৯ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লাখ হারে মানুষ রাজধানী ছাড়তে পারে। এ ছাড়া এক জেলা থেকে অন্য জেলায় আরও প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ ঈদে বাড়ি যেতে পারে।
রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজ্জামেল হক চৌধুরী এ তথ্য জানান। ঈদযাত্রায় অসহনীয় যানজট, যাত্রী হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘আগামী ১৬ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ঈদ যাত্রায় গ্রামের বাড়ি যাতায়াতসহ নানা কারণে দেশের বিভিন্ন শ্রেণির পরিববহনে বাড়তি প্রায় ৯০ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে। ১৬ এপ্রিল থেকে ঈদ যাত্রা শুরু হলেও প্রধানত ১৮ এপ্রিল বেতন-বোনাস পাওয়ার পর ১৯ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লাখ হারে মানুষ রাজধানী ছাড়বে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গণপরিবহণে সড়ক পথে ছয় থেকে ১০ লাখ, নৌপথে ৮ থেকে ১০ লাখ, রেলপথে দেড় লাখ যাত্রী ওভারলোড হয়ে যাতায়াত করতে পারে। কিন্তু ২০ এপ্রিল অফিস খোলা থাকায় এই ৫০ লাখ যাত্রীর একটি বড় অংশ আটকে যাচ্ছে। এই কারণে ২০ এপ্রিল সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হলে যাত্রী চাপ কিছুটা কমতে পারে। নয়তো ২১ এপ্রিল সড়ক-রেল-নৌ পথের পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।’
এ জন্য ২০ এপ্রিল এক দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি যাত্রাপথে বাড়তি নিরাপত্তা, সর্বোচ্চ সতর্কতা, প্রতিটি যানবাহনের সর্বোচ্চ ব্যবহার সুনিশ্চিত করা জরুরি বলে জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
ঈদ যাত্রায় যানজটের আশঙ্কার কথা জানিয়ে সংগঠনটি জানায়, যানজট ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে গণপরিবহনে সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে এবারের ঈদযাত্রায় ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। দেশে সড়ক পথে গণপরিবহনের ভয়াবহ সংকট চলছে। এমন পরিস্থিতিতে মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রার সুযোগ দিলে রাজধানীর পাঁচ থেকে ছয় লাখ বাইকার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে পারে। এতে ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হলেও সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঝুঁকি বহুলাংশে বেড়ে যাবে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব আরও বলেন, ‘এবারের ঈদ যাত্রায় রাজধানীতে তীব্র যানজটের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বে ঘরমুখো মানুষ। তাই এই মূহূর্ত থেকে রাজধানীর সকল পথের ফুটপাত, রাস্তা হকার ও অবৈধ পার্কিং মুক্ত করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানান।
রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের প্রবেশদ্বারগুলোতে যানজট নিয়ন্ত্রণে রাস্তার মোড় পরিষ্কার রাখা ও ছোট যানবাহন বিশেষ করে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক প্রধান সড়কে চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান। তা-না হলে আগামী ২৫ রমজান থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত দুপুরের পর থেকে গভীর রাত অবধি রাজধানী অচল হয়ে যাবে বলে সতর্ক করেন তিনি।
এ ছাড়া অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ ও পরিবহন সংকটকে পুঁজি করে কিছু অসাধু পরিবহন মালিক অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চালাতে মড়িয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, ‘ভাড়া নৈরাজ্যকারীদের বিরুদ্ধে সরকার প্রতি বছর ঈদে কাগজে বাঘের মতো হুঁশিয়াশি উচ্চারণ করলেও দৃষ্টান্তমূলক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার কারণে এবারের ঈদে সকল পথে দ্বিগুণ-তিনগুণ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য হতে পারে।’ তাই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
এবার প্রথমবারের মতো ঈদযাত্রার টিকিট শতভাগ অনলাইনে দেয়ার সিদ্ধান্তের কারণে রেলপথে যাত্রীদের কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হতে পারে বলে মনে করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।