২০২৩ সালেও বিশ্ব অর্থনীতির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ

২০২৩ সালেও বিশ্ব অর্থনীতির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ

করোনা মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ, জলবায়ু সংকটের থাবা থেকে এখনো নিষ্কৃতি পাচ্ছে না বিশ্ব অর্থনীতি। ফলে ২০২৩ সালেও মূল্যস্ফীতি ও মন্দার মতো ধাক্কা শিল্প-বাণিজ্য জগতের ওপর চাপ বজায় রাখতে পারে।

২০২০ সাল থেকে করোনা মহামারির কারণে বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি ২০২২ সালে আবার মাথা তুলে দাঁড়াবে, এক বছর আগে এমন আশা দানা বাঁধছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইউক্রেন যুদ্ধ, জলবায়ু সংকট ও রেকর্ড মাত্রার মূল্যস্ফীতি সেই প্রবণতা পুরোপুরি বানচাল করে দিল।

পরিস্থিতি সামলাতে শিল্পোন্নত দেশগুলোকে বরং বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢেলে সাধারণ মানুষের দুর্দশা কিছুটা হলেও কমানোর উদ্যোগ নিতে হয়েছে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, সরকারি হস্তক্ষেপ এবং চাহিদা ও জোগানের মধ্যে বিস্তর ফারাক মুক্তবাজার অর্থনীতির পথে অনেক বাধা সৃষ্টি করায় শিল্প-বাণিজ্য জগৎও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঐতিহাসিক অ্যাডাম ট্রুজ এই অবস্থাকে ‘পলিক্রাইসিস’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

 

২০২৩ সালেও পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষণ দেখছেন না একাধিক অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতির ধাক্কা আরো কিছুকাল থেকে যাবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো চলতি বছর সুদের হার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতির মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে ২০২৩ সালে বিশ্বের একাধিক অঞ্চলে চরম মন্দার আশঙ্কা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় এলাকায় মূল্যস্ফীতির হার কমতে শুরু করলেও শিল্প-বাণিজ্য জগতের পক্ষে আবার মাথা তুলে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে উঠেছে।

অর্থনীতির ওপর প্রবল চাপ সামাল দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তথা জার্মানি অভূতপূর্ব অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে কৃত্রিম উপায়ে সাধারণ মানুষের দুর্দশা কমানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ব্র্যুগেল নামের এক থিংক ট্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জন্য ইইউ সেই লক্ষ্যে ছয় হাজার ৭৪০ কোটি ইউরো ব্যয় করার পরিকল্পনা করছে। এর মধ্যে শুধু জার্মানিই দুই হাজার ৬৪০ কোটি ইউরো ব্যয় করতে চলেছে।

তবে এর মাধ্যমে ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি হিসেবে জার্মানির মানুষের কমে চলা ক্রয়ক্ষমতার সমস্যা সামাল দেওয়া যাবে কি না, তা অবশ্য এখনো স্পষ্ট নয়। নতুন বছর জার্মানি ও ইতালি মন্দার কবলে পড়বে বলে অনেক অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা করছেন। কাঁচামাল ও শ্রমিক-কর্মীর অভাবের কারণে জার্মান কম্পানিগুলো চাহিদা সত্ত্বেও উৎপাদন বাড়াতে না পারায় পরিস্থিতি আরো কঠিন হয়ে পড়ছে৷

এদিকে চীনে করোনা মহামারির ধাক্কা সামলাতে কড়া লকডাউন বন্ধ হওয়ায় বিশ্ব অর্থনীতির জন্য কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশটির স্বাস্থ্য পরিষেবা হিমশিম খেলেও দীর্ঘ বিরতির পর আমদানি-রপ্তানির গতি আবার স্বাভাবিক হলে বিশ্ব অর্থনীতি উপকৃত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি আগামী ৮ জানুয়ারি থেকে আন্তর্জাতিক বিমানযাত্রার ক্ষেত্রেও কভিড সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়া হচ্ছে।

যুদ্ধবিগ্রহের মতো মানুষের সৃষ্টি করা সংকট দূর করা সম্ভব হলেও জলবায়ু সংকটের থাবা অর্থনীতির বিশাল ক্ষতি করে চলেছে। প্রাকৃতিক ও মানুষের তৈরি বিপর্যয়ের ফলে শুধু ২০২২ সালেই দুই ৬৮০ কোটি ডলার অঙ্কের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে সুইস আরই নামের রিইনস্যুরেন্স কম্পানি। শুধু হারিকেন আয়ান নামের ঘূর্ণিঝড়ের কারণেই ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ছিল ৫০০ থেকে ৬৫০ কোটি ডলার। মিসরে জলবায়ু সম্মেলনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঝুঁকি সামাল দিতে এক বিশেষ তহবিল গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

More News...

তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী জানুয়ারিতে ঢাকায় আসছেন

পাচারের ১৭ লাখ কোটি ফেরাবে কে, পাচারে ফোকলা দেশের অর্থনীতি