প্রজনন মৌসুমে মৎস্য সম্পদ ও বন্যপ্রাণীর প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষে টানা তিন মাস বন্ধ থাকার পর পর্যটক ও জেলেদের জন্য খুলছে সুন্দরবনের দ্বার। বনের উপর নির্ভরশীল জেলেরাও তাদের জীবিকার অন্বেষণে মাছ শিকারে যাবে সুন্দরবনে। এজন্য জেলে পল্লিতে ফিরছে কর্মচাঞ্চল্যতা। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সুন্দরবন ভ্রমণের সুযোগ পাবে। এ কারনে ইতোমধ্যে ট্যুর অপারেটর, লঞ্চ ও বোট চালকরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
পদ্মা সেতুর কারনে যোগাযোগ সহজ হওয়ায় সুন্দরবনে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে বন বিভাগ ও ট্যুর অপারেটরদের প্রত্যাশা।
১ জুন থেকে ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে সব ধরণের মানুষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বন বিভাগ। ২০১৯ সাল থেকে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এদিকে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ থেকে তিন মাস মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞার সময় বেকার জেলেদের খাদ্য সহায়তা দিতে ৫ হাজার ৬ শত জেলেদের একটি তালিকা করে মন্ত্রনালয় পাঠানো হলেও কোনো বরাদ্ধ পাওয়া যায়নি।
সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল জেলে জাহাঙ্গীর, বেলায়েত, রুস্তুমসহ কয়েকজন জেলে জানায়, পূর্ব সুন্দরবনে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় বেকার হয়ে পড়ে হাজার হাজার জেলে ও পর্যটনের সঙ্গে জড়িত বনজীবিরা। মাছ ধরতে না পেরে জেলোরা পরিবার পরিজন নিয়ে চড়া সুধে ধার দেনা করে নানা কষ্টে দিন কেটেছে। শুক্রবার থেকে আবারও সুন্দরবনে মাছ ধরতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি। সংসারের ভরন-পোষনের জন্য হিংস্র বাঘ ও কুমিরকে উপেক্ষা করে মাছ শিকার করতে হয়। তারা তিন মাসের পরিবর্তে দু’মাসের অবরোধের দাবি জানান।
মংলা বন্দরের ট্যুর অপারেটর বাবুল ও এমাদুল হক বলেন, পদ্মা সেতুর কারনে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় তিন মাস বন্ধের পরে সুন্দরবন ভ্রমনে পর্যটকদের ভিড় বাড়তে পারে। এ জন্য আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। তবে সুন্দরবনে পর্যটকদের আনাগোনা বৃদ্ধিপায় নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত। এ সময় মূলত পর্যটনের মৌসুম।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) শেখ মাহাবুব হাসান বলেন, তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে জেলেদের মাছ ধরা ও পর্যটকদের সুন্দরবন ভ্রমনের জন্য পাস(অনুমতিপত্র) দেওয়া শুরু হবে। এ জন্য রেঞ্জের অন্যান্য ষ্টেশনগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুন্দরবনের সম্পদ সুরক্ষায় বন বিভাগ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, আজ শুক্রবার(১ সেপ্টেম্বর) থেকে জেলে ও বনজীবিরা সুন্দরবনে যেতে পারবেন।
মৎস্য সম্পদ রক্ষায় ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট প্লানিং এর (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছর ১ জুলাই থেকে ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত ২ মাস বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ থাকে। কিন্তু এ বছর মৎস্য বিভাগের সাথে সমন্বয় করে সময় আরও এক মাস বাড়িয়ে ১ জুন থেকে ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত করেছে বন মন্ত্রনালয়।
তিন মাস মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞার সময় বেকার জেলেদের খাদ্য সহায়তা দিতে ৫ হাজার ৬ শত জেলেদের একটি তালিকা প্রস্তুত করে মন্ত্রনালয় পাঠানো হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত কোনো বরাদ্ধ পাওয়া যায়নি।