আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদীয় দলনেতা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তাঁর দল একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্বকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
আজ রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. সাহাবুদ্দিন মাঠের রাজনীতি করেছেন। রাজনীতি করতে গিয়ে তিনি ঝুঁকি নিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছেন। যিনি মুক্তিযোদ্ধা, যার মধ্যে ভদ্রতা, নম্রতা একইসাথে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা সব কিছুরই সমন্বয় আছে। আর এ বিষয়ে বিএনপির অনাগ্রহের কারণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি তাদের অশ্রদ্ধা।’
রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রস্তাবিত ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ সমর্থিত মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়নপত্র এ দিন নির্বাচন কমিশনে দাখিলের পর দুপুরে সচিবালয়ে বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদ-বিএসপি নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকে মিলিত হন তথ্যমন্ত্রী। সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, বিএসপি সভাপতি মো. মোজাফফর হোসেন পল্টু ও সাধারণ সম্পাদক এম জি কিবরিয়া চৌধুরী সভায় বক্তব্য দেন।
অ্যাডভোকেট মো. সাহাবুদ্দিন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন উল্লেখ করে সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাবনা টাউন হল ময়দানে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনকারীদের অন্যতম ছিলেন মো. সাহাবুদ্দিন। ১৯৬৭-৬৮ সালে তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৬৯-৭০ সালে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি, ১৯৭০-৭৩ সালে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৪-৭৫ সালে জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন, দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে মিছিল করেছিলেন এবং সেই অপরাধে ২০ আগস্ট অ্যাডভোকেট সাহাবুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং ৩ বছরের বেশি সময় তিনি কারাগারে অবরুদ্ধ ছিলেন। কারামুক্তির পর তিনি ১৯৮০ সালে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।’
এরপর অ্যাডভোকেট সাহাবুদ্দিন বিসিএস জুডিসিয়াল ক্যাডারে যোগদান করেন এবং ১৯৯৫-৯৬ সালে তিনি জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব নির্বাচিত হন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সিনিয়র জজ হিসেবে অবসরের পর তাকে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি দমন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব দেন এবং সেই দায়িত্ব পালনকালে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ যে অসত্য সেটি তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আপনারা জানেন, পদ্মা সেতুতে যে কোনো দুর্নীতি হয়নি সেটি কানাডার আদালতে প্রমাণিত হয়েছে।’
‘বিএনপি নেতাদের রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই’এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান বলেন, ‘বিএনপির তো দেশটা নিয়েই কোনো আগ্রহ নেই। তাদের সমস্ত আগ্রহের মূল কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে তারেক রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়া। দেখুন কীভাবে শাস্তিপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমানকে তারা তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বানিয়েছে এবং বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখে! আমরাও চাই তিনি ফিরে আসুক, শাস্তির মুখোমুখি হোক, বিচার কাজের মুখোমুখি হোক। আর বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে তাদের সমস্ত আগ্রহ। জনগণ বা দেশ নিয়ে তো তাদের কোনো আগ্রহ নেই।’
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আসলে গণতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি অশ্রদ্ধাশীল বিধায় বিএনপি এ ধরনের কথা বলতে পারে যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। এর অর্থ হচ্ছে গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি তাদের কোনো আগ্রহ নেই।’
বিএনপির পদযাত্রায় নানা সংঘর্ষ নিয়ে প্রশ্নে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি তো সারা দেশে সংঘর্ষ ছড়িয়ে দেওয়া এবং বিশৃঙ্খলা তৈরির অসৎ উদ্দেশ্যেই ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার কর্মসূচি নিয়েছিল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সতর্ক পাহারায় ছিল, শান্তি সমাবেশ করেছে, সে জন্য তারা সারাদেশে যেভাবে বিশৃঙ্খলা করতে চেয়েছিল তা পারেনি। এরপরও বিভিন্ন জায়গায় অস্ত্র উঁচিয়ে তাদের অগ্নিসন্ত্রাসীরা সেই সব সমাবেশে যোগ দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ আর তাদেরকে ২০১৩-১৪-১৫ সালের মতো সেই পরিস্থিতি তৈরির সুযোগ দেবে না।’